ঈদুল আযহা 2024 কত তারিখে - কুরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে

ঈদুল আযহা 2024 কত তারিখে এই কথাটি অনেকে জানতে চাই। ঈদুল আযহার মূল তাৎপর্য হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর জীবনের একটি ঘটনায় নিহিত। আল্লাহর প্রতি তাঁর আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য তিনি নিজ পুত্র ইসমাইল (আ.) কে কুরবানি করতে প্রস্তুত হন। আল্লাহ তাঁর আনুগত্যের পরীক্ষা নিয়ে শেষ মুহূর্তে ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে একটি পশু কুরবানির নির্দেশ দেন। এই ত্যাগের মহান শিক্ষাকে স্মরণ করে ঈদুল আযহা পালিত হয়।
আজকে আমি আপনাদের সাথে ঈদুল আযহা 2024 কত তারিখে বাংলাদেশে হবে তা বিস্তারিত আপনাদের সাথে আলোচনা করব। কোরবানি ঈদ, যাকে ঈদুল আযহা বা বকরিদও বলা হয়, মুসলমানদের জীবনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র উৎসব। এই দিনটি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং ত্যাগের প্রতীক। কোরবানি ঈদ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা নিম্নরূপ।

পোস্ট সূচিপত্র

  • ঈদুল আযহার মূল দিকসমূহ
  • ২০২৪ সালের ঈদুল আযহা কত তারিখে
  • ঈদুল আজহা ২০২৪ কত তারিখে সৌদি আরব
  • কুরবানির পশু জবাই করার পদ্ধতি ও দোয়া
  • ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত
  • ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত আরবিতে
  • ঈদুল ফিতরের তাকবীর কখন শুরু হবে এবং কখন শেষ হবে
  •  মেয়েদের কি ঈদের সালাতে যাওয়া জায়েয আছে
  • ঈদুল আযহার ইতিহাস-কুরবানি ঈদের ইতিহাস
  • ঈদুল আযহার ইসলামিক শুভেচ্ছা
  • শেষ মন্তব্য

ঈদুল আযহার মূল দিকসমূহ

ঈদুল আযহা, যাকে কুরবানির ঈদ বা বকরিদও বলা হয়, মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এটি ইসলামিক ক্যালেন্ডারের জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পালিত হয়, যা হজের শেষ দিন। ঈদুল আযহার মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এই দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয় হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর আত্মত্যাগের স্মৃতিতে।
  1. কুরবানি: মুসলমানরা ঈদুল আযহাতে পশু কুরবানি করেন, যা হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর কুরবানির ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে দেয়। কুরবানির পশু হতে পারে গরু, ছাগল, ভেড়া বা উট। কুরবানি করা পশুর মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের জন্য, এবং এক ভাগ গরীব ও দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
  2. নামাজ: ঈদুল আযহার দিন সকালে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। এই নামাজটি দুই রাকাতের এবং জামাতের সাথে আদায় করা হয়। নামাজ শেষে খুতবা দেওয়া হয়, যা ইসলামী জীবন ও কুরবানি সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর উপর আলোচনা করে।
  3. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক: ঈদুল আযহা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও সংহতির প্রতীক। এ দিনে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো হয়, উপহার বিনিময় করা হয় এবং বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়।
  4. হজ: ঈদুল আযহা হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মুসলমানদের জীবনে হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত এবং এটি সম্পন্ন করতে পারা একটি বিশাল ধর্মীয় গর্বের বিষয়।
ঈদুল আযহা মুসলমানদের জন্য শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি তাদের ঈমানকে মজবুত করে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করে।

২০২৪ সালের ঈদুল আযহা কত তারিখে

২০২৪ সালের ঈদুল আযহা ১৭ই জুন তারিখে পালিত হবে। এটি ইসলামিক চন্দ্র ক্যালেন্ডারের ধুল-হিজ্জাহ মাসের ১০ম দিনে পড়ে। ঈদুল আযহা মূলত হজের আনুষ্ঠানিকতার অংশ এবং এটি হজের শেষ দিনে উদযাপন করা হয়। এই উৎসবের দিন চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে, তবে সাধারণভাবে ১৭ই জুন ২০২৪ তারিখে এই উৎসব পালিত হবে।

ঈদুল আযহার তাৎপর্য

  • ঐতিহাসিক পটভূমিঃ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে তার পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে কুরবানি করার জন্য প্রস্তুত হন। আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি দুম্বা পাঠানো হয় এবং ইসমাইল (আঃ) এর পরিবর্তে সেটি কুরবানি করা হয়। এই ত্যাগের ঘটনা স্মরণে ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়।
  • কুরবানিঃ ঈদুল আযহার মূল আচার হল পশু কুরবানি করা। গরু, ছাগল, ভেড়া, বা উট কুরবানি করা হয় এবং এর মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়: এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের জন্য, এবং এক ভাগ দরিদ্র ও অভাবীদের জন্য।
  • ধর্মীয় আচারঃ ঈদুল আযহার দিন সকালে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়, যা দুই রাকাতের এবং জামাতের সাথে আদায় করা হয়। নামাজ শেষে খুতবা দেওয়া হয় যেখানে কুরবানি ও ইসলামী জীবনবোধ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

ঈদুল আযহার তারিখ

  • ২০২৪ সালের ঈদুল আযহা ১৭ই জুন, রবিবার পালিত হবে। এটি ইসলামিক চন্দ্র ক্যালেন্ডারের ধুল-হিজ্জাহ মাসের ১০ম দিনে পড়ে। তবে চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই তারিখ কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। এজন্য স্থানীয় ইসলামিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত।
ঈদুল আযহা মুসলমানদের জন্য একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব এবং এটি সামাজিক ও পারিবারিক মিলনের দিন। পরিবারের সবাই একত্রিত হয়ে বিশেষ খাবারের আয়োজন করে, নতুন পোশাক পরে এবং একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়। এছাড়াও, কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও ত্যাগের প্রতীক হিসেবে নিজেদেরকে নিবেদন করে।

ঈদুল আজহা ২০২৪ কত তারিখে সৌদি আরব

২০২৪ সালে সৌদি আরবে ঈদুল আযহা পালিত হবে ১৬ জুন, রোববার। এই দিনটি ধুল-হিজ্জাহ মাসের ১০ম দিন হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে। ঈদুল আযহার উদযাপন মূলত চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল, তাই এই তারিখগুলি কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে।

তারিখ ও সময়

  • শুরু: ১৬ জুন ২০২৪, শনিবার সন্ধ্যা থেকে।
  • মূল দিন: ১৭ জুন ২০২৪, রোববার।
  • শেষ: ১৮ জুন ২০২4, মঙ্গলবার পর্যন্ত।

ঈদুল আযহা উদযাপন

  • ঈদুল আযহা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ত্যাগের স্মরণে উদযাপিত হয়, যেখানে তিনি আল্লাহর নির্দেশে তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে কুরবানি করার জন্য প্রস্তুত হন।
  • আল্লাহর নির্দেশে পরিবর্তে একটি দুম্বা কুরবানি করা হয়েছিল।
  • মুসলমানরা এই দিন পশু কুরবানি করে, এবং কুরবানির পশুর মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়—এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের জন্য, এবং এক ভাগ গরীব ও দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

ধর্মীয় আচার

  • ঈদুল আযহার দিন সকালে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়, যা দুই রাকাতের হয় এবং এটি ঈদগাহ বা মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করা হয়।
  • নামাজ শেষে খুতবা দেওয়া হয় যেখানে কুরবানি ও ইসলামী জীবনবোধ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক

  • ঈদুল আযহা পারিবারিক এবং সামাজিক মিলনের দিন।
  • পরিবারের সবাই একত্রিত হয়ে বিশেষ খাবারের আয়োজন করে, নতুন পোশাক পরে এবং একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়।

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট

  • সৌদি আরবে ঈদুল আযহা চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।
  • ধুল-হিজ্জাহ মাসের ৯ম দিন অর্থাৎ আরাফাত দিবস ১৫ জুন ২০২৪ তারিখে পালিত হবে।
  • এই সময় হজের আনুষ্ঠানিকতা চলে, যা ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ।
ঈদুল আযহা মুসলমানদের জন্য একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব এবং এটি সামাজিক ও পারিবারিক মিলনের দিন। এটি তাদের ধর্মীয় জীবন এবং সামাজিক সংহতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

কুরবানির পশু জবাই করার পদ্ধতি ও দোয়া

কোরবানির সময়কাল হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। এই তিন দিনের যে কোনো দিন কোরবানি করা জায়েজ। তবে প্রথম দিন কোরবানি করা সর্বাপেক্ষা উত্তম। তারপর দ্বিতীয় দিন। তারপর তৃতীয় দিন। জিলহজ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পর কোরবানি করা শুদ্ধ নয় (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৬)। একইভাবে ঈদুল আজহার নামাজের আগে কোরবানি করা বৈধ নয়। (কুদুরি, পৃষ্ঠা ১৯৮)

কোরবানি পশু জবেহ করার জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজের কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করেছেন। যার যার কোরবানির পশু তাদের নিজ হাতে জবাই করার কথাও এসেছে হাদিসে। কোরবানির পশু জবাইয়ের রয়েছে নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া। অধিকাংশ মানুষ কোরবানি নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া না জানার কারণেই নিজের কোরবানি নিজেরা করেন না। অথচ কোরবানির নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া খুবই সহজ। তবে পশু জবাইয়ের সময় সুন্নাতের অনুসরণে জবাই করাই উত্তম। তাহলো-
  • একঃ পশু জবেহ করার সময় ‘بِسْمِ الله: বিসমিল্লাহ’ বলে জবেহ করা। অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলেই ছুরি চালানো শুরু করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যেন পশু জবেহ করা না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখা।
  • দুইঃ পশু জবেহ করার সময় একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, পশুর খাদ্যনালি, শ্বাসনালি আর দুই পাশে থাকা দুটি নালি কেটে দেওয়া। এ নালিগুলে কাটা হয়ে গেলেই পশু জবেহ বিশুদ্ধ হয়ে যায়।
  • তিনঃ পশু জবেহ করার জন্য ছুরি ভালোভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে। যাতে জবেহ করার সময় পশুর কষ্ট না হয়। অনেকে একটি ছুরি দিয়ে একাধিক পশু কোরবানি করে থাকেন। সেক্ষেত্রে শেষ দিকে ছুরির ধার কমে যায়। তাই ছুরিতে ধার দিয়ে নেওয়া উত্তম।
  • চারঃ একটি পশুর সামনে অন্য পশুর জবেহ না করা। পশুর সামনে ছুরি-চাকুতে ধার না দেওয়া। এতে পশু ভয় পেয়ে যায়। এটি পশুকে কষ্ট দেওয়ারও শামিল।
  • পাঁচঃ কোরবানি করার সময় পশুকে পশুর বাম কাতে শোয়ানো। সে সময় পশুর পাগুলো পশ্চিম দিকে থাকবে।
জবাই করার সময় "বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবর" বলা হয়, যা মানে "আল্লাহর নামে, আল্লাহ মহান"।

সম্পূর্ণ দোয়া

"إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ. إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ، وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ. اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ."

বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা-মিনকুম' কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম। ' উল্লেখ্য, যদি কেউ একাকি কুরবানি দেয় এবং নিজে জবাই করে তবে বলবে মিন্নি; আর অন্যের কুরবানির পশু জবাই করার সময় 'মিনকা-মিনকুম' বলে যারা কুরবানি আদায় করছে তাদের নাম বলা।

বাংলা অনুবাদ

“নিশ্চয়ই আমি আমার মুখমন্ডল সেই সত্তার প্রতি একাগ্রতার সাথে ফেরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ সবকিছুই আল্লাহর জন্য, যিনি সকল জগতের প্রতিপালক। তার কোনো শরিক নেই, এবং এভাবেই আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এবং আমি মুসলিমদের মধ্যে প্রথম। হে আল্লাহ, এটি আপনার পক্ষ থেকে এবং আপনার জন্য।"

যদি কেউ এ দোয়াটি না পারেন তবে ছোট্ট এ অংশটুকু পড়বেন-

بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

বাংলা উচ্চারণঃ ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।’

নিজের পশু নিজে কোরবানি করলে পশু জবেহ করার পর এ দোয়া পড়া-

اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم

বাংলা উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।’

অন্য কেউ কোরবানি বা অন্য কারো কোরবানি করলে এ দোয়া পড়া-

اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم

বাংলা উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা-মিনকুম’ কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।’

উল্লেখ্য, যদি কেউ একাকি কোরবানি দেয় এবং নিজে জবাই করে তবে বলবে মিন্নি; আর অন্যের কোরবানির পশু জবাই করার সময় ‘মিনকা-মিনকুম’ বলে যারা কোরবানি আদায় করছে তাদের নাম বলা।

এই দোয়া জবাই করার সময় পড়া উত্তম এবং এতে আল্লাহর নামে জবাই করার মাধ্যমে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আনুগত্য প্রকাশ করা হয়।

ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত

আর মাত্র দুই দিন পরই মুসলামানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। আর এই ঈদের প্রথম কাজ হচ্ছে নামাজ আদায়। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ শেষ করার পর কিছুটা বিরতি দিয়ে ভাল পোশাক ও আতর সুরমা লাগিয়ে ঈদগাহে নামাজের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে হয়। অনেকেই হয়তো জানেন না ঈদুল আযহার নামাজ কীভাবে আদায় করতে হয়। ঈদুল আযহার নামাজ অন্যান্য নামাজের মতোই আদায় করতে হয়। এ নামাজে রুক, সিজদা, তাশাহুদ সবই আছে। শুধু মাত্র অতিরিক্ত ছয় তাকবির দিতে হয়।

ইমামের পেছনে কেবলামুখি হয়ে ঈদুল আযহার দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায় করছি- এমন নিয়ত করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত তুলে তাহরিমা বাঁধবে। তারপর সানা (সুবহানাকাল্লাহুম্মা..) পুরোটা পড়বে। এরপর আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহর আগে তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবির বলবে। প্রথম দু’বার কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে ছেড়ে দেবে।

কিন্তু তৃতীয়বার বলে হাত বেঁধে নেবে। প্রত্যেক তাকবিরের পর তিনবার সুবহানাল্লাহ বলার পড়ে থামবে। তারপর আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পড়ে সূরায়ে ফাতেহার পরে একটা সূরা মেলাবে। এরপর রুকু, সিজদা করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে। এবার অন্যান্য নামাজের মতো বিসমিল্লাহর পরে সূরা ফাতেহা পড়ে আরেকটা সূরা মেলাবে। তারপর তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলার মাধ্যমে তিনটা তাকবির সম্পন্ন করবে। এখানে প্রতি তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দেবে এবং চতুর্থবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত না বেঁধে রুকুতে চলে যাবে। এরপর সেজদা এবং আখেরি বৈঠক করে যথারীতি সালাম ফিরায়ে নামাজ শেষ করবে।

ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত আরবিতে

 نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

অর্থ : আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি- ‘আল্লাহু আকবার’।

ঈদুল ফিতরের তাকবীর কখন শুরু হবে এবং কখন শেষ হবে

রমযান মাসের সমাপ্তি লগ্নে আল্লাহ্‌ তাআলা বান্দার জন্য তাকবীর দেওয়ার বিধান দিয়েছেন। তিনি বলেন: "তিনি চান তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি যে তোমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন সে জন্য তাকবীর উচ্চারণ কর (আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর) এবং যাতে তোমরা শোকর কর।"[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৫] তাকবীর উচ্চারণ কর মানে: তোমাদের অন্তর দিয়ে ও মুখ দিয়ে আল্লাহ্‌র মহত্ব ঘোষণা কর। সেটি তাকবীরের শব্দাবলীর মাধ্যমে হতে পারে। যেমন আপনি এভাবে বলতে পারেন

আলহামদু লিল্লাহ

রমযান মাসের সমাপ্তি লগ্নে আল্লাহ্‌ তাআলা বান্দার জন্য তাকবীর দেওয়ার বিধান দিয়েছেন। তিনি বলেন: "তিনি চান তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি যে তোমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন সে জন্য তাকবীর উচ্চারণ কর (আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর) এবং যাতে তোমরা শোকর কর।"[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৫] তাকবীর উচ্চারণ কর মানে: তোমাদের অন্তর দিয়ে ও মুখ দিয়ে আল্লাহ্‌র মহত্ব ঘোষণা কর। সেটি তাকবীরের শব্দাবলীর মাধ্যমে হতে পারে। যেমন আপনি এভাবে বলতে পারেন:

الله أكبر ، الله أكبر ، لا إله إلا الله ، والله أكبر ، الله أكبر ، ولله الحمد 

(উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ)(অনুবাদ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ্‌ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ্‌ মহান, আল্লাহ্‌ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য।)

কিংবা আপনি তিনবার করে এভাবেও বলতে পারেন

الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله . والله أكبر ، الله أكبر ، ولله الحمد

(উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ)(অনুবাদ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ্‌ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ্‌ মহান, আল্লাহ্‌ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য।)

সবই জায়েয

জমহুর আলেমের নিকট এই তাকবীর দেওয়া সুন্নত। এটি নর-নারী উভয়ের জন্য সুন্নত; মসজিদসমূহে, বাড়ী-ঘরে এবং হাটে-বাজারে। পুরুষেরা উচ্চস্বরে তাকবীর দিবেন। আর নারীরা চুপে চুপে তাকবীর দিবেন। কেননা নারীরম তার কণ্ঠস্বর নীচু রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যখন তোমাদের নামাযে সন্দেহপূর্ণ কিছু ঘটবে তখন পুরুষেরা তাসবিহ পড়বে। আর নারীরা তালি দিবে"।

তাই নারীরা তাকবীর বলবে গোপনে। পুরুষেরা বলবে উচ্চস্বরে।

তাকবীর বলা শুরু হবে ঈদের রাতের সূর্য ডোবা থেকে; যদি সূর্য ডোবার আগেই জানা যায় যে, শাওয়াল মাস প্রবেশ করেছে; সেটা এভাবে যে, মানুষ যদি মাসের ত্রিশদিন পূর্ণ করে। কিংবা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার মাধ্যমে। আর তাকবীর দেওয়া শেষ হবে ঈদের নামায আদায় করার মাধ্যমে। অর্থাৎ মানুষ যখন ঈদের নামায শুরু করবে তখন তাকবীর দেওয়ার সময় শেষ।[মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন (১৬/২৬৯-২৭২)]

ইমাম শাফেয়ি "আল-উম্ম" গ্রন্থে বলেন

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: "তিনি চান তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি যে তোমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন সে জন্য তাকবীর উচ্চারণ কর।" আমি কুরআনের জ্ঞানের ব্যাপারে যে আলেমের প্রতি সন্তুষ্ট তার থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেন: তোমরা সংখ্যা পূরণ কর অর্থাৎ রমযান মাসের রোযার সংখ্যা। তিনি যে তোমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন সে জন্য তাকবীর উচ্চারণ কর। অর্থাৎ মাস পূর্ণ করার সময় তিনি যে তোমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন সে জন্য তাঁর বড়ত্বের ঘোষণা দাও। মাস পূর্ণ করা হচ্ছে- রমযান মাসের সর্বশেষ দিনের সূর্য অস্ত যাওয়া।

এরপর শাফেয়ি বলেন

যখন লোকেরা শাওয়ালের চাঁদ দেখবে তখন আমি পছন্দ করি যে, তারা দলবদ্ধভাবে ও আলাদা আলাদাভাবে মসজিদে, বাজারে, রাস্তাঘাটে, বাড়ীঘরে, সফররত অবস্থায়, মুকীম অবস্থায়, সর্বাবস্থায়, যেখানেই থাকুক না কেন তাকবীর দিবে। এবং উচ্চস্বরে তাকবীর দিবে। এভাবে তারা প্রত্যুষে ঈদগাহে আসা পর্যন্ত তাকবীর দিতে থাকবে। এমনকি প্রত্যুষের পর ইমাম নামায পড়াতে আসা পর্যন্ত তাকবীর দিতে থাকবে। এরপর তারা তাকবীর বন্ধ করবে।

এরপর তিনি সাঈদ বিন মুসায়্যিব, উরওয়া বিন যুবাইর, আবু সালাম, আবু বাকর বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণনা করেন যে, তারা ঈদুল ফিতরের রাতে মসজিদে উচ্চস্বরে তাকবীর দিতেন। উরওয়া বিন যুবাইর ও আবু সালাম বিন আব্দুর রহমান থেকে এটাও বর্ণিত আছে যে, তারা দুইজন যখন ঈদগাহে যেতেন তখনও তারা উচ্চস্বরে তাকবীর দিতেন। নাফে বিন জুবাইর থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন ঈদের দিন সকাল বেলা ঈদগাহে যেতেন তখন উচ্চস্বরে তাকবীর দিতেন।

ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন ঈদের দিন সকাল বেলা সূর্যোদয়ের সময় ঈদগাহে যেতেন তখন তাকবীর দিতেন; যতক্ষণ না ঈদগাহে পৌঁছেন। এরপর ঈদগাহেও তাকবীর দিতে থাকতেন যখন পর্যন্ত না ইমাম আসন গ্রহণ করেন। তখন তাকবীর ছেড়ে দিতেন।[সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]

মেয়েদের কি ঈদের সালাতে যাওয়া জায়েয আছে

হ্যা, অবশ্যই। উলামায়ে কিরাম এটাকে জরুরী বলেছেন। তারা যাবে।

পাঁচওয়াক্ত সালাত ও জুমু‘আর জামাতে শরীক হওয়ার জন্য মেয়েদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি দিয়েছেন। আর ঈদের সালাতের যাওয়ার জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসে আছে যে,

عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ نُخْرِجَ فِي الْفِطْرِ وَالأَضْحَى الْعَوَائِقَ وَالْحَيْضَ وَذَوَاتِ الْخُدُرِ فَأَمَّا الْحَيْض فَيَعْتَزِلن الصَّلاَةَ وَيَشْهَدْنَ الْخَيْرَ وَدَعْوَةِ الْمُسْلِمِيْنَু قَالَتْ يَارَسُوْلَ اللهِ إِحْدَانَا لاَ يَكُوْنُ لَهَا حِلْبَابَ قَالَ لتلبسَهَا أُخْتِهَا

বাংলা অনুবাদঃ উম্মে আতিয়ার কর্তৃত্বে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারেন, তিনি বলেন: আল্লাহর রসূল - আল্লাহর দোয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক - আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রাতঃরাশ এবং ঈদুল আযহার সময় প্রতিবন্ধকতা সহ, ঋতুমতী মহিলাদের এবং পুরুষত্বহীন মহিলারা ঋতুস্রাব হয়, তাই তারা প্রার্থনা থেকে সরে যায় এবং মুসলমানদের আহ্বান জানায়, তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল, তিনি বললেন, তার বোনকে এটি পরিধান করা উচিত।

‘‘উম্মে আতীয়াহ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহিনীসহ সকল মহিলাকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে শরীক হওয়ার জন্য ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাই। এমনকি মাসিক হায়েয চলাকালীন মেয়েরাও (ঈদগাহে হাজির হবে। তবে তারা) সালাত আদায় থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু ঈদের কল্যাণকর অবস্থা তারা প্রত্যক্ষ করবে এবং মুসলিমদের সাথে দু‘আয় ঋতুবতী মহিলারাও শরীক হবে।

উম্মে আতীয়াহ  বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের মধ্যে কারো কারো উড়না নেই (বড় চাদর নাই যা পরিধান করে ঈদগাহে যেতে পারে)। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার ওড়না নেই সে তার অন্য বোন থেকে (ধার করে) ওড়না নিয়ে তা পরিধান করে ঈদগাহে যাবে। (মুসলিম: ৮৯০) বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্ণিত এ হাদীসে যে ঋতুবতী মহিলার উপর সালাত আদায় ফরজ নয় তাকেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং যার উড়না নেই তাকেও একটা উড়না ধার করে নিয়ে ঈদের সালাতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ হাদীস দ্বারা অনেক বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম মেয়েদের ঈদের সালাতে যাওয়া ওয়াজিব বলেছেন। যেসব লোক একথা বলেন যে, বর্তমান যুগ ফিতনার যুগ, মেয়েদের নিরাপত্তা নেই এসব কথা বলে মেয়েদেরকে ঈদের সালাত থেকে বঞ্চিত রাখছেন। তাদের এ অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। তারা যেন প্রকারান্তরে এ হাদীসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। শেষ যামানার ফিতনা বাড়বে একথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের চেয়ে বেশি অবগত থাকার পরও মহিলাদেরকে ঈদের সালাতে যেতে হুকুম দিয়েছেন। আর এ হুকুম সুন্নাত নয়, বরং ওয়াজিব।

মেয়েরা ঈদের সালাতে গেলে পথিমধ্যে তাকবীর বলা, সালাতে শরীক হওয়া, বয়ান ও ওয়াজ নসীহত শোনার সৌভাগ্য তাদের হয়ে থাকে। কাজেই ক্ষতির যে আশংকা করা হয় এর চেয়ে তাদের উপকারের দিকই বেশি। তাই সম্মানিত ঈদগাহ কর্তৃপক্ষের উচিৎ তারা যেন মেয়েদের জন্য পৃথক প্যান্ডেল তৈরীকরে দেন আর মেয়েরাও যেন সম্পূর্ণ শরয়ী পর্দা করে অত্যন্ত শালীনভাবে পথ চলেন, ঈদগাহে যাওয়া আসা করেন। কাউকে ডিস্টার্ব না করেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে সহীহ হাদীস আমল করার ও হক পথে থাকার তাওফীক দান করুন- আমীন!

ঈদুল আযহার ইতিহাস-কুরবানি ঈদের ইতিহাস

মুসলমানদের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ উৎসব ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। পবিত্র কুরআনে কুরবানীর বদলে ‘কুরবান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। হাদীছেও ‘কুরবানী’ শব্দটি ব্যবহৃত না হয়ে এর পরিবর্তে ‘উযহিয়াহ’ ও ‘যাহিয়া’ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আর এজন্যই কুরবানীর ঈদকে ‘ঈদুল আযহা’ বলা হয়। আর আযহা শব্দটি আরবীতে ‘কুরবান’ (قربان) ফারসী বা ঊর্দূতে ‘কুরবানী’ রুপে পরিচিত হয়েছে, যার অর্থ ‘নৈকট্য’। পারিভাষিক অর্থে تَعَالَي القربانُ ماَ يُتقَرَبُ بِهِ إِلَ الَّلهِ ‘কুরবানী’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিল হয়।
প্রচলিত অর্থে, ঈদুল আযহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শারঈ তরীকায় যে পশু যবহ করা হয়, তাকে ‘কুরবানী’ বলা হয়। সকালে রক্তিম সূর্য উপরে ওঠার সময়ে ‘কুরবানী’ করা হয় বলে এই দিনটিকে ‘উয়াওমুল আযহা’ বলা হয়ে থাকে। যদিও কুরবানী সারাদিন ও পরের দুদিন করা য়ায়। আর কোরবানির শাব্দিক অর্থ ত্যাগ।

জিলহজ্ব মাসের দশ তারিখে পরম ত্যাগের নির্দেশনা স্বরূপ বিশ্ব মুসলিম মহাসমারোহে হজের অন্যতম অংশ পশু জবাইয়ের মাধ্যমে কোরবানি/ ঈদুল আযহা উৎসব পালন করে। সুতরাং ত্যাগের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মুসলমান জাতি যে উৎসবে মিলিত হয় তাই ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ। কোরবানি মুসলিম জাতির একটি ঐতিহ্য হওয়ায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণেই রাসুল (সা) সব সময় কোরবানি করেছেন। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি বর্জনকারী ব্যক্তির প্রতি তিনি সতর্কবানী উচ্চারণ করেন। রাসুল(সা) বলেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাঁয়ে না আসে।

কুরবানীর ইতিহাস

কুরবানীর ইতিহাস ততোটাই প্রাচীন যতোটা প্রাচীন মানব অথবা ধর্মের ইতিহাস। আল্লাহ রাহে কুরবানী মানব জাতির প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত সকল শরীয়তেই কার্যকর ছিলো। সকল নবীর উম্মতকেই কুরবানী করতে হয়েছে। প্রত্যেক উম্মতের ইবাদতের এ ছিল একটা অপরিহার্য অংশ। আল্লাহতায়ালার এ বিধান মানব জাতির সৃষ্টি লগ্ন থেকেই কার্যকর হয়ে আসছে। মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাস এটাই সাক্ষ্য দেয় যে, পৃথিবীর সব জাতি ও সম্প্রদায় কোন না কোন ভাবে আল্লাহর দরবারে নিজেদের প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করে । এটাই মানুষের চিরন্তন স্বভাব বা ফিতরাত। এ ফিতরাতের স্বীকৃতি প্রদান করে মহান আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেছেন।

وَلِـكُلِّ اُمَّةٍ جَعَـلْـنَا مَنْسَكًا لِّـيَـذْكُرُوْا اسْمَ اللهِ عَلى مَـا رَزَقَـهُمْ مِنْ بَـهِيـْمَةِ الْاَنْـعَـامِ

“আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানীর এক বিশেষ রীতি পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন তারা ওসব পশুর উপর আল্লাহর নাম নিতে পারে যে সব আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন”। (সূরা আল হজ্জ-৩৪)মানব ইতিহাসের সর্ব প্রথম কুরবানী : মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম কুরবানী হযরত আদম আ. এর দু’পুত্র হাবিল ও কাবিলের কুরবানী। এ ঘটনাটি বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী সনদ সহ বর্ণিত হয়েছে।

ইবনে কাসীর একে ওলামায়ে মোতাকাদ্দেমীন ও ওলামায়ে মোতায়াখ্খেরীনের সর্ব সম্মত উক্তি বলে আখ্যা দিয়েছেন। ঘটনাটি এই যখন আদম ও হাওয়া আ. পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন প্রতি গর্ভ থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ যমজ সন্তান জন্ম গ্রহণ করত। তখন এক শ্রেণীর ভাই বোন ছাড়া হযরত আদমের আর কোন সন্তান ছিলনা। অথচ ভাই বোন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না।

তাই মহান আল্লাহ উপস্থিত প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে আদম আ. এর শরীয়তে বিশেষ ভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্ম গ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন গণ্য হবে। সুতরাং তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহণকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে কন্যা সহোদরা বোন গণ্য হবে না। তাই তাদের পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে।

সুতরাং আমরা যেন নিছক লৌকিকতা, আত্মম্ভরিতা, বাহাদুরি ও প্রতিযোগিতামূলক রক্তক্ষরণ ও গোশত ভক্ষণ করে মহান ঈদুল আজহার তাৎপর্য ও শিক্ষাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত না করি। ইবরাহীমী ঈমান ও ইসমাঈলী আত্মত্যাগের উত্থান যদি আবার জাগ্রত হয়, তবে আধুনিক জাহেলিয়াতের গাঢ় তমিশ্রা ভেদ করে পুনরায় মানবতার বিজয় নিশান উড্ডীন হবে।

সমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসবে। তাই কুরবানীর পশুর গলায় ছুরি দেওয়ার পূর্বে নিজেদের মধ্যে লুক্কায়িত পশুত্বের গলায় ছুরি দিতে হবে। মহান আল্লাহর দরবারে আত্মসমর্পণকারী ও আত্মত্যাগী হ’তে হবে। তাকওয়া ও আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যমে প্রকৃত মুমিন বা মুত্তাকী হ’তে হবে। আমাদের ছালাত, কুরবানী, জীবন-মরণ সবকিছু আল্লাহর জন্যই উৎসর্গ হোক, ঈদুল আযহায় বিধাতার নিকট এই থাকুক প্রার্থনা।

ঈদুল আযহার ইসলামিক শুভেচ্ছা

বছর ঘুরে আমাদের জীবনে আবার ফিরে এসেছে পবিত্র ঈদুল-আযহা। মহান আল্লাহ বছরে আমাদের জন্য দুইটি শ্রেষ্ঠ আনন্দের দিন উপহার দিয়েছেন। এর একটি ঈদুল ফিতর, অপরটি ঈদুল আযহা। দুই ঈদেরই রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ঈদুল আযহা ত্যাগ ও কুরবানির বৈশিষ্ট্যে মন্ডিত। এর সাথে জড়িত রয়েছে হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) এর মহান ত্যাগের নিদর্শন। এই ত্যাগের মূলে ছিল আল্লাহর প্রতি ভালবাসা এবং তার সন্তুষ্টি অর্জন। পোস্টের শুরুতেই সকল ব্লগার, মডারেটর ও ব্লগ কর্তপক্ষকের প্রতি রইল ঈদ মোবারক ও শুভেচ্ছা।

ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা প্রেরণ করছি! আল্লাহ তা'আলা আমাদের ঈদের উৎসবে সবার মধ্যে সুখ, আনন্দ এবং আশীর্বাদ নিয়ে এসে দিলেন। আমার প্রার্থনা এবং শুভেচ্ছা যে সবাইকে এই উৎসবে আনন্দ এবং আল্লাহর কৃপা প্রাপ্ত হোক। ঈদুল আযহার সম্পূর্ণ মানবিকতা ও বন্ধুত্বের প্রতীক, তাই আমরা সবাই এই উৎসবে আপনার পরিবারের সমৃদ্ধি, আনন্দ এবং সান্ত্বনা পাবার আশা করি। শুভ ঈদুল আযহা! 🌙🕌✨

শেষ মন্তব্য

ঈদুল আযহা একটি গৌরবময় ইসলামিক উৎসব, যা মুসলিম সমাজের জীবনে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ হিসাবে পরিচিত। এটি একটি ধারাবাহিক উৎসব, যেখানে সমাজের সদস্যরা একত্রে আসে এবং আল্লাহর কৃপা, শান্তি এবং সম্পর্কের ভাবনা উপভোগ করে। ঈদুল আযহা মানুষের মধ্যে সহিষ্ণুতা, আনন্দ, একতা এবং ভ্রাতৃত্বের আবির্ভাব করে। এই উৎসবের সময়ে আমরা আল্লাহর কৃপার জন্য প্রার্থনা করি

আল্লাহর ধন্যবাদ জানাই এবং আল্লাহর দ্বারা আমাদের প্রেরিত সমস্ত অনুগ্রহের জন্য আবেগ প্রকাশ করি। এই সময়ে আমরা আল্লাহর উপরে আদর জানাই এবং আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থকতা এবং সমর্থনের সাথে তার রহমতে আশা করি। ঈদুল আযহা একটি অত্যন্ত গৌরবময় উৎসব যা সমস্ত মুসলিম সমাজের জীবনে উপলব্ধি করা হয়। ঈদুল আযহা এবং এর উপলক্ষে শুভেচ্ছা এবং আল্লাহর কবুলিয়ত সবার সাথে থাকুক। শুভ ঈদুল আযহা! 🌙🕌✨

আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগে থাকে এবং আপনি যে বিষয়ে তথ্য জানার জন্য আর্টিকেলটি পড়া শুরু করেছিলেন তা পেয়ে থাকেন তাহলে নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url