দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের ১০টি লক্ষণের কারণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন

 দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের ১০টি লক্ষণের কারণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে আজ জানাবো। সচরাচর দাঁতের মাড়িতে ঘা বা ব্যথা হলে খুব একটা পাত্তা দেওয়া হয় না। সাধারণত এগুলো সামান্য যত্নেই সেরে ওঠে। তবে, এটাকে হেলাফেলা করার কোনো সুযোগ নেই। দাঁতের মাড়িতে ব্যথা বা মুখের মধ্যে ঘা অনেক সময় ক্যান্সারেরও পূর্বাভাস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাথা থেকে ঘাড় এই অংশের মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দেহের অন্যান্য অংশের চেয়ে কম। এতে করে যে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা ডেন্টিস্টের কাছে ধরা পড়ে। ফলে ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে তা অনেক সময় সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব হয়। তবে, বিরল হলেও দাঁতের মাড়ি, মুখ, গলা, কণ্ঠনালি, লালাগ্রন্থি, নাকের গর্ত এবং সাইনাস ক্যান্সার হওয়ার পরিসংখ্যান কম নয়।

পোস্ট সূচীপত্র

  • মুখের ক্যান্সারে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়
  • মুখের ক্যান্সারে যেসব পরীক্ষা
  • দাঁতের মাড়ির ক্যান্সারের চিকিৎসা
  • মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি
  • দাঁতের ক্ষয় হওয়ার কারণ গুলো কি কি 
  • দাঁতের ক্ষয় রোধ করার কিছু উপায়
  • দাঁতের মাড়িতে ফোড়া হলে কি ক্যান্সার হতে পারে
  • মুখের ক্যান্সার থেকে পরিত্রাণ পেতে করণীয়

মুখের ক্যান্সারে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়

মুখের ক্যান্সার, যাকে ওরাল ক্যান্সারও বলা হয়, মুখের ভেতরের বিভিন্ন অংশে শুরু হতে পারে, যেমন ঠোঁট, জিহ্বা, গাল, মাড়ি, তালু এবং গলার পেছনে। মুখের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা কার্যকর এবং সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। নিচে মুখের ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ ও প্রাথমিক চিহ্নগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

মুখের ক্ষত বা আলসার

মুখের ভেতরে বা ঠোঁটে একধরনের ক্ষত বা আলসার দেখা দিতে পারে যা সহজে নিরাময় হয় না। এই ক্ষতগুলো প্রায়শই বেদনাদায়ক হতে পারে এবং রক্তপাত হতে পারে।

লাল বা সাদা দাগ

মুখের ভেতরে লাল (ইরিথ্রোপ্লাকিয়া) বা সাদা (লিউকোপ্লাকিয়া) দাগ দেখা দিতে পারে। এই দাগগুলো স্বাভাবিকভাবে নিরাময় হয় না এবং স্পর্শ করলে ব্যথা হতে পারে।

মাড়ি বা মুখের ফোলা

মাড়ি বা মুখের ভেতরে অস্বাভাবিকভাবে ফোলা অংশ দেখা দিতে পারে। এটি একটি নির্দিষ্ট স্থানে হতে পারে বা পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

দাঁত নড়বড়ে হওয়া

কোনো সুস্পষ্ট কারণে দাঁত নড়বড়ে হয়ে যাওয়া বা দাঁতের অবস্থান পরিবর্তন হওয়া মুখের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

মুখে বা গলায় গাঁট

মুখে বা গলায় গাঁট বা লাম্প দেখা দিলে তা ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে। এই গাঁটগুলো সাধারণত স্পর্শ করলে ব্যথা করে।

ব্যথা

মুখের ভেতরে বা গলায় স্থায়ী ব্যথা, যা সাধারণ ওষুধে কমে না, এটি মুখের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। চোয়াল, কণ্ঠনালী, এবং গলায় ব্যথা হতে পারে।

গলার সমস্যা

খাবার গেলার সময় বা পানীয় পান করার সময় কষ্ট বা ব্যথা অনুভূত হওয়া, গলার ক্যান্সারের একটি সাধারণ লক্ষণ। এছাড়াও, গলার ভিতরে কিছু আটকে থাকার অনুভূতি হতে পারে।

মুখের ভিতরের ত্বকের পরিবর্তন

মুখের ভিতরের ত্বক মোটা বা শক্ত হয়ে যাওয়া, বা মুখের ভিতরের ত্বকের রঙ পরিবর্তন হওয়া (যেমন লাল, সাদা বা কালো দাগ) মুখের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

জিহ্বার সমস্যা

জিহ্বার উপরে বা নিচে ব্যথা, ক্ষত, বা দাগ দেখা দেওয়া। জিহ্বা নাড়াতে কষ্ট হওয়া এবং স্বাদ পরিবর্তন হওয়াও হতে পারে।

মুখের দুর্গন্ধ

স্থায়ী মুখের দুর্গন্ধ বা হ্যালিটোসিস, যা সাধারণ পরিচর্যায় কমে না, এটি একটি মুখের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

কণ্ঠস্বর পরিবর্তন

কণ্ঠস্বর হঠাৎ করে পরিবর্তন হওয়া বা কণ্ঠস্বর বসে যাওয়া, যা স্বাভাবিকভাবে নিরাময় হয় না।

চিবানোর সমস্যা

চিবানোর সময় ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা, যা খাদ্য গ্রহণের সময় সমস্যা সৃষ্টি করে।

মুখের ভিতরে রক্তপাত

মুখের ভেতরে স্থায়ী রক্তপাত যা সহজে বন্ধ হয় না, এটি একটি গুরুতর লক্ষণ।

শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা

শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া বা গলায় আঁটসাঁট অনুভব করা, যা গলার ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

শারীরিক দুর্বলতা ও ওজন কমা

শারীরিকভাবে দুর্বলতা অনুভব করা এবং অকারণ ওজন কমা, যা শরীরে ক্যান্সারের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।

মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

  • ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য এড়ানো: ধূমপান, চিবানোর তামাক এবং পান খাওয়া মুখের ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
  • অ্যালকোহল সেবন সীমিত করা: অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
  • সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষা: ঠোঁটের ক্যান্সার প্রতিরোধে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা।
  • সুস্থ মৌখিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা: নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখা এবং ডেন্টিস্টের সাথে পরামর্শ করা।

চিকিৎসা

মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের অবস্থান, পর্যায়, এবং রোগীর সাধারণ স্বাস্থ্যের উপর। সাধারণত ব্যবহৃত কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি হলো।
  • শল্যচিকিৎসা (Surgery)
  • ক্যান্সারের টিস্যু অপসারণ করা।
  • মাড়ি, জিহ্বা, বা চোয়ালের অংশবিশেষ অপসারণ করা।
  • রেডিয়েশন থেরাপি (Radiation Therapy)
  • উচ্চ শক্তির রশ্মির মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা।
  • কেমোথেরাপি (Chemotherapy)
  • ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য ওষুধ প্রয়োগ করা।
  • ইমিউনোথেরাপি (Immunotherapy)
  • শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে শক্তিশালী করা।
মুখের ক্যান্সারের লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার শনাক্ত এবং চিকিৎসা করলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। যদি উপরের কোনও লক্ষণ দেখা যায়, তবে দ্রুত একজন দন্তচিকিৎসক বা ওরাল সার্জনের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের নির্ধারিত চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চললে মুখের ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url