কোন টাকা-পয়সা খরচ না করে নতুনের মত চকচকে হবে ফ্রিজ রইল ১০টি টিপস

ঘরে আসবে নতুন ফ্রিজ। খুশির শেষ নেই। পরিবারের সব সদস্য মিলে করছেন নানা পরিকল্পনা। ফ্রিজটি কোথায় রাখা হবে, কোনদিকে ঘোরানো থাকবে ইত্যাদি। ফ্রিজ কেনার পর বাসায় নিয়ে এসে আর অপেক্ষা করতে মন সায় দেয় না। কিন্তু এখানেই দরকার অপেক্ষা; পরিকল্পনামাফিক ফ্রিজটি স্থাপন করা।
নতুন ফ্রিজ বাসায় এনেই চালু করা যাবে না। সঠিক নিয়মে এর ব্যবহার শুরু করতে হবে। শুরুতেই ফ্রিজ চালুর বিষয়ে ভুল করলে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। ফ্রিজ ব্যবহারের কিছু নিয়মকানুন আছে, যা সঠিকভাবে মেনে চললে গৃহস্থালি এই পণ্য নিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হবে না। চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্র

  • ডিপ ফ্রিজ পরিষ্কার করার নিয়ম
  • গরমকালে ফ্রিজের তাপমাত্রা কত রাখা উচিত
  • ফ্রিজের ভলিউম কত রাখা ভালো
  • গরমে ফ্রিজের তাপমাত্রা
  • স্যামসাং ফ্রিজের তাপমাত্রা
  • শীতকালে ফ্রিজের সঠিক তাপমাত্রা
  • ওয়ালটন ফ্রিজ ব্যবহারের নিয়ম
  • ফ্রিজের নরমালে পানি জমে কেন

ডিপ ফ্রিজ পরিষ্কার করার নিয়ম

ডিপ ফ্রিজ নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি, কারণ এটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতে, খাবারের মান অক্ষুণ্ণ রাখতে এবং ডিপ ফ্রিজের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিচে ডিপ ফ্রিজ পরিষ্কার করার নিয়ম এবং কারণগুলি দেওয়া হলো
  • ফ্রিজটি আনপ্লাগ করুনঃ পরিষ্কার করার আগে ফ্রিজটি বিদ্যুৎ থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন।
  • খাবার সরিয়ে ফেলুনঃ সমস্ত খাবার বের করে নিন এবং একটি কুলার বা অন্য ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন যাতে তারা নষ্ট না হয়।
  • বরফ গলানোঃ দরজা খুলে রেখে বরফ গলতে দিন। দ্রুত গলানোর জন্য ড্রিপ প্যানের মধ্যে গরম পানি রাখতে পারেন।
  • দ্রব্য সরানঃ ড্রয়ার, তাক এবং অন্যান্য সরঞ্জাম বের করে নিন। এগুলি আলাদাভাবে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
  • ভিতরের অংশ পরিষ্কার করুনঃ নরম কাপড় বা স্পঞ্জ ব্যবহার করে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত কুসুম গরম পানি দিয়ে ফ্রিজের ভেতরের অংশ মুছে পরিষ্কার করুন। খেয়াল রাখুন যেন কোন অংশ স্ক্র্যাচ না হয়।
  • স্টেইনলেস স্টীল পৃষ্ঠ পরিষ্কার করুনঃ বাহিরের অংশে যদি স্টেইনলেস স্টীল থাকে, তাহলে স্টেইনলেস স্টীল ক্লিনার বা পানি ও ভিনেগারের মিশ্রণ দিয়ে মুছুন।
  • গন্ধ দূর করুনঃ ফ্রিজের ভেতরে একটি ওপেন বেকিং সোডা কন্টেইনার রেখে দিন। এটি গন্ধ শোষণ করবে।
  • ভালভাবে শুকানঃ সমস্ত অংশ ভালভাবে শুকিয়ে নিন। তারপর ড্রয়ার এবং তাকগুলি পুনরায় স্থাপন করুন।
  • ফ্রিজ পুনরায় চালু করুনঃ ফ্রিজটি পুনরায় প্লাগ ইন করুন এবং সেট করার পর খাবারগুলি পুনরায় ফ্রিজে রেখে দিন।

ডিপ ফ্রিজ পরিষ্কার করার কারণগুলি

  • স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখাঃ খাদ্য সংরক্ষণ স্থানে জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া বেড়ে ওঠা থেকে রোধ করতে নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি।
  • খাবারের মান অক্ষুণ্ণ রাখাঃ পরিষ্কার ফ্রিজ খাবারের মান বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা করে।
  • ফ্রিজের কার্যকারিতা বাড়ানোঃ নিয়মিত পরিষ্কার ফ্রিজের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং বিদ্যুৎ খরচ কমায়।
  • বরফ জমে থাকা রোধ করাঃ বরফ জমে থাকা কমানো গেলে ফ্রিজের কার্যকারিতা বাড়ে এবং খাদ্য সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়।
  • দীর্ঘস্থায়ীতা বৃদ্ধিঃপরিষ্কার এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ফ্রিজের জীবনের আয়ু বাড়ায়।
ডিপ ফ্রিজ নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে ফ্রিজের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং খাবার স্বাস্থ্যকর থাকে।

গরমকালে ফ্রিজের তাপমাত্রা কত রাখা উচিত

গরমকালে ফ্রিজের তাপমাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গরম আবহাওয়ায় খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে ফ্রিজ এবং ফ্রিজারের তাপমাত্রা ঠিক রাখা প্রয়োজন। নিচে ফ্রিজের তাপমাত্রা এবং এর কারণগুলো বর্ণনা করা হলো।

ফ্রিজের তাপমাত্রা

  • ফ্রিজঃ ৩৭-৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস)
  • ফ্রিজারঃ ০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস)

কারণগুলো

  • খাবারের সতেজতা বজায় রাখাঃ খাবারকে দীর্ঘ সময় সতেজ এবং পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে ফ্রিজের তাপমাত্রা ৩৭-৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট রাখা উচিত। উচ্চ তাপমাত্রায় খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক বৃদ্ধি রোধ করাঃ ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক বৃদ্ধি পেতে পারে না, যা খাবারকে নিরাপদ রাখে। উষ্ণ তাপমাত্রায় এই জীবাণু দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বজায় রাখাঃ সঠিক তাপমাত্রায় খাবার রাখলে তার স্বাদ এবং গন্ধ বজায় থাকে। উচ্চ তাপমাত্রায় রাখলে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তিত হতে পারে।
  • ফ্রিজের কার্যকারিতা বজায় রাখাঃ ফ্রিজের তাপমাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে ফ্রিজ ভালোভাবে কাজ করে এবং বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। তাপমাত্রা ঠিক না থাকলে ফ্রিজ বেশি পরিশ্রম করতে হয়, যা বিদ্যুৎ খরচ বাড়ায়।
  • স্বাস্থ্যগত সুরক্ষাঃ খাবারের তাপমাত্রা সঠিক থাকলে খাদ্যবাহিত রোগের ঝুঁকি কমে। উচ্চ তাপমাত্রায় খাবার দ্রুত নষ্ট হলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়।

অতিরিক্ত পরামর্শ 

  • ফ্রিজের দরজা বন্ধ রাখুনঃ ফ্রিজের দরজা অপ্রয়োজনীয়ভাবে খোলা রাখবেন না, যাতে ফ্রিজের তাপমাত্রা ঠিকমতো বজায় থাকে।
  • ফ্রিজে অতিরিক্ত ভিড় করবেন নাঃ ফ্রিজে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন, যাতে সব খাবার সমানভাবে ঠাণ্ডা হয়।
  • ফ্রিজের সিল পরীক্ষা করুনঃ ফ্রিজের দরজার সিল ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন, যাতে ঠাণ্ডা বাতাস বের না হয়।
এই নিয়মগুলি মেনে চললে গরমকালে আপনার ফ্রিজ সঠিক তাপমাত্রায় থাকবে এবং খাবার নিরাপদ ও সতেজ থাকবে।

ফ্রিজের ভলিউম কত রাখা ভালো

ফ্রিজের ভলিউম সঠিকভাবে বজায় রাখা জরুরি, কারণ এটি ফ্রিজের কার্যকারিতা, বিদ্যুৎ খরচ, এবং খাবারের সতেজতা ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলে। ফ্রিজের ভলিউম বা ধারণক্ষমতা নির্বাচন করার সময় বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করতে হয়। নিচে ফ্রিজের ভলিউম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

পরিবারের আকার

  • ছোট পরিবার (১-২ জন): ৫০-২০০ লিটার
  • মাঝারি পরিবার (৩-৪ জন): ২০০-৩০০ লিটার
  • বড় পরিবার (৫ বা তার বেশি): ৩০০-৫০০ লিটার বা তার বেশি

ব্যবহার এবং সংরক্ষণ প্রয়োজনীয়তা

  • যদি আপনি নিয়মিত রান্না করেন এবং তাজা খাবার বেশি সংরক্ষণ করেন, তবে বেশি ভলিউমের ফ্রিজ প্রয়োজন হতে পারে।
  • যারা নিয়মিত ফ্রিজারে খাবার জমিয়ে রাখেন, তাদের জন্য বড় ফ্রিজার অংশ প্রয়োজন হতে পারে।

সঠিক ভলিউম নির্বাচন করার কারণগুলো

  • ফ্রিজের সঠিক ভলিউম নির্বাচন করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে, যা আপনার দৈনন্দিন জীবনকে সহজতর এবং স্বাস্থ্যকর করতে সাহায্য করে। নিচে সঠিক ভলিউম নির্বাচন করার কারণগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো
  • খাবারের সঠিক সংরক্ষণঃ পর্যাপ্ত ভলিউম থাকলে খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায় এবং বাতাসের চলাচল ভালো হয়। এতে খাবার বেশি সময় সতেজ থাকে।
  • ফ্রিজের কার্যকারিতা বজায় রাখাঃ ফ্রিজের মধ্যে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে ঠাণ্ডা বাতাস সহজে প্রবাহিত হয় এবং ফ্রিজ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। অতিরিক্ত ভরাট করলে ফ্রিজের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
  • বিদ্যুৎ খরচ কমানোঃ ফ্রিজে অতিরিক্ত খাবার রাখলে ফ্রিজকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, যা বিদ্যুৎ খরচ বাড়ায়। সঠিক ভলিউম বজায় রাখলে ফ্রিজ কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে এবং বিদ্যুৎ খরচ কম হয়।
  • খাবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাঃ সঠিক ভলিউম বজায় রাখলে খাবারের সঠিক তাপমাত্রায় থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণু বৃদ্ধির ঝুঁকি কমায়।
  • কিছু অতিরিক্ত টিপসঃ ফ্রিজের সঠিক আকার নির্বাচন: আপনার পরিবারের আকার এবং ব্যবহার অনুযায়ী সঠিক আকারের ফ্রিজ নির্বাচন করুন।
  • ফ্রিজের দরজা সঠিকভাবে বন্ধ রাখাঃ দরজা সঠিকভাবে বন্ধ আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন, যাতে ঠাণ্ডা বাতাস বাইরে না যায়।
  • নিয়মিত পরিষ্কার করাঃ ফ্রিজের ভিতরের অংশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার সরিয়ে ফেলুন।
এই নির্দেশনাগুলি মেনে চললে আপনি ফ্রিজের ভলিউম সঠিকভাবে বজায় রাখতে পারবেন এবং ফ্রিজের কার্যকারিতা ও খাবারের সতেজতা নিশ্চিত করতে পারবেন।














এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url