আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। খালি পেটে আমলকি খেলে প্রাকৃতিকভাবে ডিটক্সিফিকেশনের বৈশিষ্ট্য গুলো সবচেয়ে কার্যকর হয় বলে মনে করা হবে।এটি শরীরের হজম সহজ করে, যা টক্সিনকে আরো দক্ষ ভাবে নির্মূল করে। আমলকি উচ্চ সামগ্রী ক্ষতিকারক প্রভাব দূর করে আরো ডিটক্সিফিকেশনের সাহায্য করে।
প্রতিদিন একটি করে আমলকি খাওয়া ভালো। কারণ আমলকি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। খেতে পারেন আমলকি আচার কিংবা মোরব্বা। এই ছোট্ট একটি ফল আপনাকে দিবে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চয়তা। চলুন জেনে নেওয়া যাক আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।
পোস্ট সূচিপএ
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
আমলকি এটি এমন একটি ভারতীয় ফল যার প্রভূত ব্যবহার রয়েছে আয়ুর্বেদে। হাজার হাজার বছর ধরে এর প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এই ফলে আয়রন, ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে থাকে। এই কারণে ফলে নির্যাস আমাদের ইম্যুনিটি বাড়িয়ে দেয়। যা শরীর ও ত্বকের জন্য যথেষ্ট উপকার হিসেবে বিবেচিত হয়।
আমলকির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়। কফ, বমি, অনিদ্,র ব্যথা বেদনায় আমলকি অনেক উপকারী। আমলকের রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলেসের সমস্যা দূর করতে পারে। এছাড়াও একটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে।
চোখ ভালো রাখার জন্য উপকারী হলো আমলকি। এতে রয়েছে ফাইটো কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িও যেন ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার র্ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কেবল চুলের গোড়া মজবুত করে তা নয়, এটি চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি চুলের খুশির সমস্যা দূর করে ও পাকা চুল প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
আমলকি সর্দি-কাশি পেটে পীড়া ও রক্তশূন্যতা দূরীকারণে বেশি ভালো কাজ করে। ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ রাখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলেও কম রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করে। আমলকির হৃদযন্ত্র ফুসফুসকে শক্তিশালী করে ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে। শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে।আমলকি টক ও তিতো মুখে রুচিও স্বাদ বাড়াই। রুচি বৃদ্ধি ও খিদে বাড়ানোর জন্য আমলকির গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়া আগে খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থার কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে আমলকির রস খেলে কি হয়
আমলকিতে রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। ডায়রিয়া জন্ডিস এবং প্রদাহের মত স্বাস্থ্য সমস্যা নিরাময়ের জন্য এটি খাওয়া যেতে পারে। আমলকি কাঁচা খাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। যেমন আচার ক্যান্ডি, জুস, গুঁড়া ইত্যাদি। সম্পাদিক সময়ে খালি পেটে আমলকি রস খাওয়া অভ্যাস জনপ্রিয়তা পেয়েছে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা কারণে।
আমলকি ভিটামিন সি এর একটি সমীদ্ধ উৎস এবং এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, আমলকির রস দিয়ে দিন শুরু করে পুষ্টির শোষণ বাড়াই এবং হজমের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, খালি পেটে আমলকি খেলে বেশ কিছু রোগ মুক্তি মিলে। কাঁচা আমলকি চাটনি বা মিছরিও খেতে পারেন। তবে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটু করে কাঁচের রক্ষা পাবেন কঠিন সব রোগব্যাধি থেকে। আমলকি নিয়মিত সেবনকারীদের অনেকেরই মত, খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানিতে আমলকির গুঁড়ো বা রস মিশিয়ে পান করলে পেট ভরে যায় এবং কম খাওয়া হয়। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকে।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আমলকির সুবিধা
- চোখের জন্যঃ মধু সঙ্গে আমলকির রস মিশিয়ে পান করলে দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি চোখের ভেতরে চাপকে হ্রাস করে। দূরের জিনিস দেখতে পায় এবং ছানি পড়তে দেয় না। ভিটামিন এ এবং ক্যারোটিনিক রাতের অন্ধত্ব কমাতে এবং আপনার দৃষ্টিকে শক্তিশালী করে।
- ত্বকের সমস্যাঃ আমলকি বীজের গুঁড়ো ব্যবহার করে দাদ, চুলকানির মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আমলকি বীজের গুড়া করে এতে নারকেল তেল মিশিয়ে রেখে দিন। যে জায়গায় ইনফেকশন হবে সেইখানে এটি লাগান কয়েক দিনের মধ্যে সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
- নিউকোরিয়াঃ মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি বেশসাধারন। এর থেকে মুক্তি পেতে আমলকির বীজ খাওয়া যেতে পারে। ৩টি আমলকির ৬ গ্রাম পানি দিয়ে ভালোভাবে মিশে নিন। তারপর এটি এক গ্লাস পানি ভালো করে মিশিয়ে নিন এরপর এতে এক চামচ দুধ এবং সামান্য মিস্ত্রি মিশিয়ে পান করুন।
- চোখের চুলকানি জ্বালাঃ চোখের চুলকানি ও জারার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমলীর বীজ খুব উপকারী।পিষে চোখের উপর লাগিয়ে শান্তি পাওয়া যায়।
- দাঁতের মাড়ি রোগ স্কার্ভি দূরীকরণঃ দাঁতের মাড়ি খুব পরিচিত একটি রোগ। সাধারণত শরীরের ভিটামিন সি এর অভাবে ক্লাবের রোগ হয়। এরূপ হলে দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, মাড়িতে ঘা হওয়া, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, চামার নিচে রক্তক্ষরণ হওয়া, চেহারা আকাশে হয়ে যাওয়া, এবং পরিবর্তন দেখা দেয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। তাই কেউ যদি প্রচুর পরিমানে আমলকি খেতে পারে তাহলে সে এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে।
- গলা ব্যথা কমাতেঃ অনেকেরই ঠান্ডা লাগলে গলায় ব্যথা হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা অবশ্যই প্রয়োজন আমলকি কারণ এটি ভিটামিন সি দ্বারা পরিপূর্ণ। এমনকি ঋতু পরিবর্তন এর সময় গলা ব্যথা হওয়া একটি সাধারন সমস্যা। তাই প্রতি নিয়ম করে সকালে খালি পেটে আমলো কি রস পান করা অভ্যাস করুন।
- হার্ডকে সুস্থ রাখতেঃ কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজের এর ক্ষেত্রে আমলকি খুবই কার্যকর। এই কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ হলো হার্টের এমন এক পরিস্থিতি যা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রমাণিত হয়েছে যে আমলকির হাটের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সাহায্য করে। যার ফলে হার্ড সুস্থ ভাবে কাজ করতে পারে ফলে রক্ত সঞ্চালন সঠিক থাকে ও কোলেস্টেরল সংক্রান্ত সমস্যা দূর হয়।
- নিজেকে সতেজ রাখতেঃ আমলকি আন্টি অক্সিডেন্ট পরিপূর্ণ যা শরীরের যেকোনো বিষক্রিয়া পদার্থকে নিমেষে শরীরের থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে। ফলে আপনি সারাদিন নিজেকে সতেজ ও ক্লান্তি মুক্ত রাখতে পারেন ও অনায়াসে দৈনন্দিন জীবন কার্যকলাপ পালন করতে পারেন।
- ওজন কমাতেঃ এককথায় নানারকম ভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে আন্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি দুটোই যখন একসাথে মিশে যায় তখন ওজন কমানোর চেষ্টা কখনো বৃথা যায় না। শরীরের ফ্যাট কোলেস্টেরলের মাএা অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ কমানোর জন্য অক্সিডেন্ট খুবই প্রয়োজনীয়। আমলকিতে উচ্চ পরিমাণে আন্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকায় সঠিকভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
আমলকির ৬টি উপকারিতা
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ আমলকি ভিটামিন সি এর একটি সমৃদ্ধ উচ্চ যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। মাত্র একটি আমলকি ভিটামিন সি ৪৬% পর্যন্ত পূরণ করতে পারে। ভারতের নিউ দিল্লি এসসিআই ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল পুষ্টিবিদ ডা. কোমল ভাদৌরিয়া জানান, আন্টি অক্সিডেন্ট পূর্ণ আমলকি কোষের ক্ষতি কমাতে কার্যকর।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ শরীরের জন্য খারাপ কলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে আমলকি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীর থেকে অবস্থিত টক্সিন দূর করে এবং রক্তনালিকে শক্তিশালী করে। আমলকি আমলকি মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে রক্ত পরিশোধন হিসেবে কাজ করে এবং প্রকৃতভাবে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে পারে।
- হজমের জন্য সহায়কঃ ভিটামিন সি এর পাশাপাশি আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে। এর দ্রবণীয় ফাইবার শরীরের দ্রুত দ্রবীভূত হয়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এসিড এবং আলসারের মতো অসুস্থতা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। ডা. কোমল ভাদৌরিয়া, আমলকি পেটে এসিডের মাথায় কমাতে সাহায্য করে।
- চুল পড়া রোধ করেঃ আমলকি তেল যুগ যুগ ধরে চুলের যত্ন ব্যবহারিত হয়ে আসছে। খুকশির প্রতিরোধ সাহায্য করে এবং চুল পড়া রোধ করে এই তেল। আমলকি নিয়মিত খাওয়ার পাশাপাশি চুলে লাগাতে পারেন আমলকি তেল।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালোঃ আমলকি রোগের গ্লুকোজের মাত্রা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে ভালো পরিমাণ দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে যা শরীরের দ্বারা ধীরে ধীরে শোষিত হয়ে এবং পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয়।
- ত্বক ভালো রাখেঃ আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে ত্বকের যত্ন রাখে। এই ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদানে সাহায্য করে। ফলে ধীরে ধীরে সুন্দর এবং কোমর ত্বক বজায় রাখে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url